শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মূলত কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল, কিন্তু এই আন্দোলন এখন রাষ্ট্র সংস্কারের দিকে বিস্তৃত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এমন একটি দেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে, যেখানে নতুন কোনো স্বৈরাচারীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না এবং ধর্ম, বর্ণ কিংবা রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। এর ফলে বৈষম্যবিরোধী লড়াই এখনও চলমান রয়েছে।
৫ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার, চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনে শহীদদের স্মরণে ‘শহীদি মার্চ’ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম শাখার নেতারা এসব কথা বলেন।
সমাবেশটি রাসেল আহমেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আওতাধীন সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তাদের বেশিরভাগের হাতে ও মাথায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দেখা যায়। বিকেল সাড়ে ৩টার পর ষোলশহর স্টেশন চত্বর থেকে ‘শহীদি মার্চ’ শুরু হয়ে বহদ্দারহাট এবং মুরাদপুর এলাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে কর্মসূচি শেষ হয়।
মিছিলের সময় শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগানে উত্তাল করে তোলে চট্টগ্রাম নগরের চার কিলোমিটার এলাকা। উল্লেখযোগ্য স্লোগানগুলোর মধ্যে ছিল: ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’, ‘আমাদের শহীদেরা, আমাদের শক্তি’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘এই যুদ্ধে জিতবে কারা, আমাদের শহীদেরা’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আইয়ুব-মুজিব-হাসিনা স্বৈরাচার মানি না’, ‘শহীদের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’। পাশাপাশি, তিস্তার পানি ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে স্লোগানও উঠে। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘সীমান্ত হত্যা বন্ধ করো, করতে হবে’ এবং স্লোগান ছিল ‘পানি পানি পানি চাই, তিস্তার পানি চাই’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’।
রাসেল আহমেদ বলেন, ‘যারা ছাত্র-জনতার এই বিজয়কে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক বার্তা দিচ্ছি। ছাত্র-জনতা রাষ্ট্র সংস্কারে এভাবেই মাঠে থাকবে। আওয়ামী লীগের ছদ্মবেশী তৎপরতা প্রতিহত করা হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘যারা দেশে লুটপাট, চাঁদাবাজি এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, তারা সাবধান না হলে ছাত্র সমাজ প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধেও মাঠে নামবে।’
শেখ হাসিনাসহ ছাত্র আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী শরীফ হাসনাত বলেন, ‘জুলাই মাসের অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। রাষ্ট্রের কাঠামোয় এখনও ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্রসমাজ অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করবে।’
গত জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দ্রুত সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। আন্দোলন দমন করতে ছাত্রলীগ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা-নির্যাতনের পর আন্দোলন সরকারের পতনের দিকে অগ্রসর হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান, যার ফলে আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেয়।