ঢাকারবিবার , ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. আন্তর্জাতিক
  2. কারিগরি
  3. ক্যাম্পাস
  4. খেলাধুলা
  5. জব কর্নার
  6. দেশ-বিদেশ
  7. প্রাথমিক
  8. বিনোদন
  9. বিবিধ
  10. বিশ্ব-বিদ্যালয়
  11. মতামত
  12. মাদ্রাসা
  13. মাধ্যমিক
  14. শিক্ষা
  15. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সম্মান ও সম্মানী:প্রাথমিক শিক্ষার ভবিষ্যত

shikshabatayon
সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪ ৯:৩০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গভেষণা ইনস্টিটিউট এর অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান স্যারের একটি উক্তি দিয়ে শুরু করছি,”শিক্ষার উন্নয়ন চাইলে সর্বাগ্রে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন জরুরি।”
স্যারের এই উক্তির বিশ্লষণ স্যার ই সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।বিভিন্ন সময় নানা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়,বর্তমানে সংস্কার কমিটি হয়তো গঠিত হবে আশা করি শিক্ষা গভেষক যাঁরা আছেন বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গভেষণা ইনস্টিটিউট, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ,পিটিআই সুপার,ইন্সট্রাক্টর,ন্যাপ এর শিক্ষা বিশেষজ্ঞ রাখলে ভালো ফলাফল বা মতামত বের হয়ে আসতো।আমি স্যারের সরাসরি ছাত্র।নন ফরমাল এডুকেশনের একটি কোর্স ছিলো আমার।আমি স্যারের কথা যদি বিশ্লেষণ করি বা আমরা স্যারদের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করে যতটুকু বুঝেছি একটি শিশুর শিক্ষার প্রথম ভিত্তি তথা ফাউন্ডেশন গড়ে উঠে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।ফাউন্ডেশন গড়াটা অনেক কঠিন কাজ।এটা নিয়ে কাজ না করলে আপনি বুঝতে পারবেন না এটা কতটা কঠিন।আমরা যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান করি আমাদের সমাজে খুব একটা সম্মান দেওয়া হয় না।একজন শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যেকোন ব্যক্তি আমাদের নানা কটু কথা বলেন যা আমরা হজম করে থাকি।আমি স্বীকার করি আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানান অসঙ্গতি ছিলো,বর্তমানেও আছে।আবার ঢালাও ভাবে সকল স্কুল জাতীয়করণটাও ঠিক হয় নি।কিন্তুু বর্তমানে যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করছেন সবাই উচ্চ শিক্ষিত এবং মনে প্রাণে তাদের কাজটা করে যাচ্ছেন।কিন্তুু সমাজের মানুষের মনোভাব বদলায় নি।বদলায় নি কোন বৈষম্য,হয় নি কোন সংস্কার।নেওয়া হয় নি কোন সংস্কারের উদ্যোগ।একটি পাঁচতলা বিল্ডিং এর ফাউন্ডেশন যদি ঠিকমত না হয় তাহলে বিল্ডিং যেমন নিরাপথ নয় তেমনী শিক্ষার্থীদের ভীত শক্ত না হলে ভবিষ্যত ভালো হবে না।আপনি ভালো কাজ করবেন,তার প্রতিদানে শুনতে হবে বসে বসে বেতন নেন,বছরের অর্ধেক সময় বন্ধ সহ আরও কত কিছু!যাঁরা শ্রম,দক্ষতা দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের প্রাপ্য সম্মান না দিলে মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভবনা থাকতে পারে।সাধারণ মানুষের মুখ কেও বন্ধ রাখতে পারে না পারবেও না।বাংলাদেশের সকল নাগরিকের বাক্ স্বাধীনতা আছে।কিন্তুু মান্ধতার আমলের প্রাথমিক শিক্ষার সাথে বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা মিলালে হিসাবের অঙ্ক মিলবে না,বাড়বে ক্রোধ যা একসময় বিদ্রোহে রূপ নেওয়ার সম্ভবনা আছে।তবে আমরা যারা নব্বই এর দশকের বা তার আগের সেই মান্ধাতার আমলের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উঠে এসেছি।আমি আগেই বলেছি ঢালাওভাবে জাতীয়করণ ঠিক হয় নি।তবে যা হয়েছে তা আর ফিরে আসবে না,কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।আবার আমার শিক্ষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান স্যারের একটি উক্তি মনে পড়ে গেল,”মোমবাতির মত আলো দেয়া সহজ নয়।করণ,অন্যকে আলোকিত করতে হলে নিজেকে আগুনে পোড়াতে হয়।”সেই মোমবাতি হলেন শিক্ষক।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ নিজ নিজ সকল ক্ষেত্রে অসম্মানিত করে তাঁর পাশের জন থেকে শুরু করে আত্নীয়, বন্ধু,স্বজন।তাঁদের যোগ্য সম্মান রাষ্ট্রীয়ভাবে করা উচিত।আমি আমার লেখার শিরোনামে উল্লেখ করেছি সম্মান ও সম্মানী।বর্তমানে শিক্ষকদের সম্মান আটকে আছে সালামের মাধ্যেই।আর সম্মানী,অন্য পেশার চেয়ে সবচেয়ে কম সম্মানী তথা গ্রেড দেওয়া হয় প্রাথমিক শিক্ষকদের।প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন করতে আগে শিক্ষকের উন্নয়ন করতে হবে।বর্তমানে ২০১৮-২০২৩ পর্যন্ত যাঁরা প্রাথমিকে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেছেন তাঁরা সবাই পে-স্কল ২০১৫ অনুযায়ী ৯ম গ্রেড পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন।তাছাড়া তারও আগে নিয়োগকৃত বেশিরভাগ শিক্ষক ই অনেক স্বচ্ছতার সাথে কাজ করেন বলে দেশে আজ ডাক্তার,প্রকৌশল,ব্যারিস্টার সহ অনেক মেধাবী বের হয়ে দেশের সেবা করার সুযোগ পাচ্ছেন।ফাউন্ডেশন শক্ত করার কাজটা প্রাথমিক শিক্ষকগণ ই করে দেন।দেশের বাইরের বেতন স্কেলের উদাহরণে আমি যেতে চাই না।দেশে স্নাতক পাশ করা একজনের স্কেল ১৩তম, সারা জীবনে কোন পদোন্নতি নেই,আর ডিপ্লোমা পাশ করা একজনের স্কেল ১০ম এবং নিয়মিত পদোন্নতির ব্যবস্থা আছে।দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই প্রাথমিক শিক্ষকগণ কে অন্তত পক্ষে ১০ম গ্রেড সহ শতভাগ পদোন্নতির ব্যবস্থা করা উচিত।প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড সহ শতভাগ পদোন্নতির ব্যবস্থা করে দেখুন আগামি ৫ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা তথা সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে।মেধাবীরা এই পেশায় আকৃষ্ট হবে,ছেড়ে চলে যাবে না।নিয়মিত টাইমস্কেল,সিলেকশন গ্রেডের ব্যবস্থা করা উচিত।প্রয়োজনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নন ভ্যাকেশনাল করা হোক।দীর্ঘ মেয়াদী ছুটি না দিয়ে শুধু সরকারি ছুটিগুলো দেওয়া হোক।জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষকগণের প্রায় সারাদিন বিদ্যালয়ে অবস্থান করতে হয়,সে ক্ষেত্রে সেগুলো কর্মদিবসের আওতায় নিয়ে আসা হোক।একজন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকের নিচে আর কোন পোস্ট নাই।আমাদের সহকারী শিক্ষকগণের দাবি শতভাগ পদোন্নতি সহ ১০ম গ্রেড প্রদান করুন।পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ও প্রাথমিক বিদ্যালয়।সেখানে আলাদা কোন কারিকুলাম নেই।তাহলে তাঁদের দশম গ্রেডের গেজটেড কর্মকর্তা করা হয়েছে কেন?সেখানে নিয়োগে এক্সর্টা যোগ্যতা চাওয়া হয় বি.এড /এম.এড।বর্তমানে যাদের বি.এড আছে তাঁদের ডিপিএড বা বিটিপিটি বাধ্যতামূলক নয়?তাহলে কেন এই বৈষম্য?বৈষম্য কোন ভালো ফলাফল বয়ে নিয়ে আসে না তা ছাত্র-জনতা প্রমান করে দিয়েছেন।আমাদের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড সহ শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে বৈষম্য দূর করার ব্যবস্থা করুন।তা না হলে আমরাও রাজপথে যাব ইনশাআল্লাহ।যদি প্রাথমিক শিক্ষা সহ শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন করতে হয় তাহলে শিক্ষক কে তাঁর যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্বাহী আদেশে ই এটা করা যাওয়ার কথা।
যেহেতু ভূমিকা তে উল্লেখ করেছি প্রাথমিক শিক্ষার ভবিষ্যত,তাহলে আরোও দু চারটা কথা বলতে চাই।অনেকে বলে থাকেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।হ্যাঁ আমিও একমত কমে যাচ্ছে।বাংলাদেশে প্রায় ১১ ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে।এর মধ্যে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা,কিন্ডারগার্টেন, নূরানী,এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়,পরীক্ষণ বিদ্যালয় ইত্যাদি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি নীতিমালার মধ্যে নিদিষ্ট ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় স্থাপিত হয়।আর প্রতিটি পিটিআই সংলগ্ন একটি করে পরীক্ষণ বিদ্যালয় রয়েছে।কিন্তুু কিন্ডারগার্টেন, নূরানী বা অন্যান্যগুলো কোন নীতিমালা অনুসরণ করে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।বেশিরভাগ গুলো শনিবার খোলা থাকে,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটির সাথে সামঞ্জস্য নেই বললেই চলে।
এক্ষেত্রে আমার নিজস্ব মতামত রয়েছে তা উল্লেখ করা হলো
*প্রতিটি উপজেলায় ৫ টির বেশি কিন্ডারগার্টেন ও নূরানীর অনুমোদন না দেওয়া
*প্রতি ইউনিয়নে ২ টির বেশি অনুমোদন না দেওয়া
*সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটির সাথে ছুটি নির্ধারণ করা
*সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাচম্যান্টের মধ্যে কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন না করা।
*ছুটিরদিন গুলোতে প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিয়মিত সুপারভিশন করা।
আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন শিক্ষার বিপক্ষে নই।কেও নিরক্ষর বা ঝরে না পড়ুক সেটা কাম্য।তবে যেখানে সেখানে ব্যাংঙের ছাতার মত প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাহত হওয়ার আশংকা থাকে।
সবশেষে বলতে চাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণের সততা,ন্যায় নিষ্ঠা,শ্রেণি কার্যক্রমে একনিষ্ঠতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করে, আমাদের অধিকার ১০ম গ্রেড চাই। শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী থেকে মুক্তি দিয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।

সোহান শাহরিয়ার
সহকারী শিক্ষক
ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ধনবাড়ী,টাংগাইল।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।