ঢাকাঃ ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ জুলাই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। তবে, পরবর্তীতে কয়েকটি জেলা ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয় এবং সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। পানি কমার সাথে সাথে কিছু মানুষ তাদের ঘরে ফিরে যেতে শুরু করেছে, কিন্তু অনেকেই এখনও আশ্রয়কেন্দ্রেই রয়েছে। বন্যায় ওই সব জেলার হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বইপত্রও নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় অনেক অভিভাবক ও শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা তাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রামাঞ্চলে যারা বইপত্র হারিয়েছেন, তাদের জন্য স্কুলগুলোকে তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে পাঠদান স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বন্যার কারণে গত ২০ আগস্ট থেকে ফেনীতে ৯২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে এবং শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
ফেনীর এক মাধ্যমিক শিক্ষার্থী, বেলাল হোসেন বলেন, ‘বন্যায় আমাদের ঘরবাড়ি এবং বইপত্র সবকিছু ডুবে গেছে। এক সপ্তাহ আত্মীয়ের বাড়িতে থাকার পর ফিরে গিয়ে দেখি সব বইপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।’
ফুলগাজী উপজেলার জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, ‘বন্যার কারণে আমাদের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি এবং গবাদিপশু সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েদের বইপত্রও নষ্ট হয়ে গেছে। স্কুল খুললে সরকার নতুন বই দিলে ভালো হবে।’
ফেনী পৌরসভার সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চয়নিকা চৌধুরী জানান, বন্যায় স্কুলভবন পুরোপুরি ডুবে ছিল এবং শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে এবং আগামী রোববার থেকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চাঁদপুরে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি কম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরে বন্যার পর শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরতে শুরু করেছে, তবে এখনও শতভাগ উপস্থিতি নেই। আখাউড়া ও কসবায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল এবং পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার পর স্কুলগুলো খুললেও উপস্থিতি কম।
নোয়াখালীতে বন্যার কারণে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানকার ৩ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান শুরু হবে।
লক্ষ্মীপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার্ত, পাঠদান ব্যাহত
লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানিতে স্কুলের মাঠ এবং আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানেও আশ্রয় নিয়েছেন মানুষ। ফলে পাঠদান শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না এবং সিলেবাস শেষ হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল লতিফ মজুমদার জানিয়েছেন, ৬০০টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবেদন করা হয়েছে।
কুমিল্লায় বন্ধ ১৭৮৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুশ্চিন্তায় অভিভাবক
কুমিল্লায় ১ হাজার ৭৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আগে থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল এবং এখন বন্যার কারণে তা আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফয়জুন্নেছা সীমা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বারবার বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়েছে, তবে ক্ষতি পুষিয়ে তোলার চেষ্টা করা হবে।