বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর “রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়” নামে যাত্রা শুরু করে। ২০০৯ সালে, সরকার পরিবর্তনের পর, বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর” রাখা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অভিযোগ রয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন নেতা-কর্মী এবং আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। একাধিক শিক্ষক, যেমন গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, আইন লঙ্ঘন করে নির্বাচনী মনোনয়ন ফরম তুলতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ৫ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে, তাদের মধ্যে কেউই সম্মানের সাথে বিদায় নিতে পারেননি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর, এবং সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য পদত্যাগ করলেও, বাকি ৩ জন উপাচার্য বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের মুখে বিদায় নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পেয়েছেন এবং তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রমজান আলী বলেন, শিক্ষকরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন তবে আবু সাঈদ হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতো না। ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী হেলাল মিয়া উল্লেখ করেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ ভিসি প্রয়োজন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে গবেষণা, ডক্টরেট বা পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকরা দলীয়করণের কারণে অবাঞ্ছিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা আক্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য একজন শিক্ষিত, বাস্তববাদী এবং আদর্শ ভিসি প্রয়োজন। ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর গাজী মুক্তচিন্তার ভিসি চেয়েছেন, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।
একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ যৌক্তিক, কারণ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকেননি। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি নিয়োগ দিলে তার স্থায়ী জবাবদিহিতা থাকবে এবং তার পালানোর সুযোগ থাকবে না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন উপাচার্যের মধ্যে কেউই সফলভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।