মন্ত্রণালয়ের লোগো পরিবর্তন করে পাঠ্যপুস্তকে দলীয় উক্তি ও শেখ হাসিনার নাম যুক্ত করার বিষয়টি সামনে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের অবদানকারী অনেকের নাম ইতিহাসের বইয়ে স্থান পায়নি। ইতিহাসের বিকৃতি ঘটে বলে অভিযোগ করে ইতিহাসবিদরা সঠিক ইতিহাসের উপস্থাপনার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানায়, বইয়ের সংশোধনের কাজ চলছে যাতে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা যায়।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের লোগো ব্যবহার করা হত। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বইয়ের ব্যাক কাভারে সরকারের প্রধানের উক্তি যুক্ত করা শুরু হয় এবং শেখ হাসিনার নাম যোগ করতে গিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লোগো পরিবর্তিত হয়।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার পেছনে যাদের অবদান রয়েছে, তাদের নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে অথবা এক-দুই বাক্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, তাজউদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের অবদান যথাযথভাবে স্বীকৃত হয়নি। এসব কারণে পাঠ্যপুস্তকের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে মনে করে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন।
সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা মন্তব্য করেছেন, পূর্ববর্তী সরকার কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়েছে এবং একটি পরিবারের প্রভাবকে সারাদেশে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যা কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনেনি।
সরকার পরিবর্তনের পর শিক্ষা সংস্কারের অংশ হিসেবে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিহাসবিদরা বলছেন, সঠিক ইতিহাসের উপস্থাপন কেন জরুরি।
বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এম ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ইতিহাসে প্রত্যেকের অবদান স্পষ্ট। সুতরাং, সেই অবদান যথাযথভাবে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। কাউকে অতিরিক্ত মূল্যায়িত করা বা অবমূল্যায়িত করার প্রয়োজন নেই; তাদের প্রকৃত অবদান অনুযায়ী উপস্থাপন করা উচিত।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড জানিয়েছে, চলমান সংশোধন প্রক্রিয়ায় ইতিহাসে প্রত্যেকের অবদান যথাযথভাবে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, বইগুলোর সংশোধনে ইতিহাসের যথাযথ অবদান প্রতিফলিত করার চেষ্টা করা হবে। আমরা সতর্কভাবে এই কাজটি সম্পন্ন করবো যাতে কোনো ব্যক্তিকে অতিরিক্ত মূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন না করা হয়।
পাঠ্যপুস্তককে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, জানিয়েছে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।