জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনে কয়েকশ ছাত্র-জনতা প্রাণ হারান এবং ১৮ হাজারের বেশি মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন আহতরা, তাদের মধ্যে শতাধিক রোগী জাতীয় অর্থোপেডিকস ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসা নিচ্ছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের অনেককে বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজন এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসারও দরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। তবে সরকারের চিকিৎসা সহায়তা মূলত রাজধানীকেন্দ্রিক, ফলে রাজধানীর বাইরে অনেকেই অর্থাভাবে চিকিৎসা চালাতে পারছেন না। এর মধ্যে বরিশালের তাইজুল ইসলাম সাব্বির অন্যতম, যিনি আন্দোলনে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. নিশাত পারভীন জানিয়েছেন, তাইজুলের চোখে গুলি ঢুকে যাওয়ায় তাকে দ্রুত বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যার জন্য প্রয়োজন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।
জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়, এতে যোগ দেন সাধারণ মানুষও। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনে প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, আন্দোলনে ৬১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, এর মধ্যে ৪৪০ জন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান এবং ১৭৮ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আহত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৬৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানিয়েছেন, হতাহতদের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান, তবে ৫ আগস্টের পর এই প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হয়েছে। সঠিক তথ্য নিরূপণের চেষ্টা চলছে। কিছু আহত ব্যক্তি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন, কিন্তু নানা সমস্যার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান হতাহতের তথ্য সংরক্ষণ করতে পারেনি। আহতদের চিকিৎসার ব্যয় সরকার বহন করছে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে মনিটরিং করা হচ্ছে।