সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) গত আড়াই মাস ধরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম এখনও পুনরায় চালু হয়নি। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে পড়াশোনা থেকে দূরে থাকার কারণে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, শিক্ষকরা তাদের নানা দাবিতে আন্দোলন শুরু করার পর ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে আরও স্থবির করে তোলে। যদিও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে আন্দোলনের অবসান হয়েছে, তবুও শাবিপ্রবিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি।
ইউজিসির নির্দেশনায় ১৭ জুলাই জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সময় শিক্ষার্থীদের ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
এর আগে, ১ জুলাই থেকে শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন, যা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলসহ তিন দফা দাবির প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলস্বরূপ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এর আগে শিক্ষকদের কয়েক দফার অর্ধদিবস ও পূর্ণদিবস কর্মবিরতির কারণে শিক্ষা কার্যক্রমে আরও ব্যাঘাত ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিকাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মমিন উদ্দিন জানিয়েছেন, করোনার কারণে তাদের এক বছরের সেশনজট ছিল। এখন আন্দোলনের কারণে এবং প্রশাসনিক অচলাবস্থার কারণে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে, যা তাদের সেশনজট আরও দীর্ঘ করতে পারে।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সামিরা ফারজানা জানান, শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় তারা নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থীর কেবল একটি বা দুটি পরীক্ষা বাকি ছিল, যা দিয়ে তারা চাকরি বা অন্যান্য আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এই সুযোগও হাতছাড়া হচ্ছে। কখন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা এখনও নিশ্চিত নয়।
১০ আগস্ট, ব্যক্তিগত কারণে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করেন। এরপর একে একে ৮৩ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। নতুন উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। কিছু ব্যক্তি ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে এবং কিছু ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে উপাচার্য নিয়োগের প্রস্তাব করছেন। তবে এখন পর্যন্ত উপাচার্য নিয়োগ হয়নি।
বর্তমানে, উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ বদিউজ্জামন ফারুককে সাময়িকভাবে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এই সপ্তাহেই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে এবং পরীক্ষাগুলি অল্প কিছুদিন পর অনুষ্ঠিত হবে।